খুব বেশী ছোটবেলার কথা না। এখনও মনে পড়ে যেদিন প্রথম দুধের-এর সাথে পিপড়া খেয়ে ফেলি সেদিন কি কান্না কেঁদেছিলাম, এই ভয়ে যদি পিপড়েটা আমার পেটের ভিতর চলাফেরা করে আর কুটুস কুটুস করে কামড় দেয়। জগৎজয়ী সে এমন কান্না একই ফ্লাটের উপর নীচ মিলিয়ে ৪ ফ্লাটের বাসিন্দাকে এক করেছিলাম।
সত্যিই হোক আর কান্না থামানোর জন্যই হোক, সবাই একই সুরে কি সুন্দর গড়গড় করে বলেছিল “বাবা ! একটা দুটো পিপড়ে খেলে তেমন কিছু হয়না, বরং পিপড়ে না খেলে তুমি সাতাঁর শিখতে পারবেনা !” তবু কি বুঝে বা না বুঝে সেদিন কান্না থামিয়েছিলাম।
পিলে চমকে দেয়ার মত খবর ! যখন বাবা অফিস থেকে ফিরেই তিনি শুনলেন, সেদিন আমি গুণে গুণে ২০টা জ্যান্ত পিপড়ে খেয়েছি, শুধু সাতার কাটা শেখার জন্য। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল বাবার, মা তাকে সাহস দিয়েছিলেন “বাবা ! কেন তুমি এ কাজ করতে গিয়েছ? এভাবে পিপড়ে খেলে কি সাতার শেখা যাবে, হঠাৎ দু-একটা পিপড়ে খেতে হবে আবার জলেও হাত পা ছাড়তে হবে, তবেই না সাতার কাটতে পারবে !” বাবার এমন সরল উক্তি আমাকে ভাবনায় ফেলালেও পরে মা-কেই ভোগান্তিতে ফেলেছিলাম। চা-এর নেশা ছিল, তাই যতবারই চা খেতাম মা-এর কাছে ততবারই আবদার, আমার অজান্তে চা-এ দু-একটি পিপড়ে ছেড়ে দিতে হবে, আর আমি সেটা চা-পান এর সাতে খেয়ে ফেলব।
আজ বড় হয়েছি, বাবা মা দুজনেরই বয়স হয়েছে, আজও চায়ের পেয়ালা হাতে বাবা-মা-এর সাথে কিছু একান্ত সময়ের কথাবার্তায় উঠে আসে সে ছোটবেলার পিপড়ে খাওয়ার স্মৃতিকথা। হঠাৎ করেই মুহূর্তের মধ্যে ছুটে যাই মা-এর আচল ধরে কাদার বয়সে গোমড়া মুখে বাবার কাছে আবদারের বয়সে, ছোট ভাইয়ের কাছে মার খেয়ে হেরে যাওয়া এই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদার বয়সে, বড়ই রোমাঞ্চকর সে মুহুর্তগুলো।
আজ মা-এর মনটা বেশ ভারাক্রান্ত, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা তাকে ভর করেছে, তার চেহারাই বলে দিচ্ছে কারণ আজ তাকে ছেড়ে আমাকে একলা একটি ট্যুরে যেতে হবে, মাঝপথে নদী পার হতে হবে। মা একলা ছাড়তে ভয় পাচ্ছেন, বারবার বাবা আর একবার আমার মুখপানে তাকাচ্ছেন,
“শোন, রাহাতের মা ! বুঝলে ছোট বয়সে ওর পিপড়ে খাওয়ানো কম হয়ে গিয়েছে, ওই যা একটু খেয়েছে, আমরা যদি একটু বেশী করে খাইয়ে দিতাম তাহলে আজ তোমাকে এত ভয় পেতে হতনা ! যাই হোক সাথে ওকে একটা পাত্রে কিছু পিপড়ে দিয়ে দাও, যেতে যেতে খেয়ে নেবে, দেখ! যদি এতেও কিছু কাজ হয়! এতদিন যা পারেনি এখন পারবে তো?”
মা-এর সমস্ত উৎকন্ঠা আর বন্ধু বাবার ঠাট্টার একটাই কারণ তারা জানে “আজও আমি সাঁতার কাটতে পারিনা, শিখতে পারিনি, পানিকে খুব ভয় পেতাম, পানিতে কখনও নামেনি, তাই শেখাটাও আর হয়ে উঠেনি” । কিন্তু আমি সত্যিই সাঁতার শিখেছি । কাওকে ডুবিয়ে দিয়ে নিজে বাঁচার কৌশল টাও ভালো করে শিখে গেছি ।
সব ক্রেডিট আমার ঐ ভয়ংকর স্বপ্নের পিপড়াগুলোর ।।
0 Comments