মুদিওয়ালার ইচ্ছাপুরন

 শহরের লেট নাইটের নিয়ন আলো যখন খুব বেশি উজ্জ্বল মনে হয় তখনও সিন্ড্রেলা দাঁড়িয়ে থাকে মুদি দোকানের সামনে । অনেক প্রতিক্ষা , আশা আর ভরসার আশ্রয় এই দোকান ।

 সিন্ড্রেলা যখন অনেক ছোট । ওর বাবা মারা যায় এক সড়ক দূর্ঘটনায় । এক রকম অসহায় অবস্থা থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মেয়ে কে নিয়ে কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসে সিন্ড্রেলার মা । অন্যের বাড়িতে ফরমায়েশ খেটে মেয়ে কে মানুষ করতে থাকে । সিন্ড্রেলা দেখতে শ্যাম বর্ণের । কিন্তু ছোট বেলা থেকেই প্রখর মেধাবী সিন্ড্রেলা অল্প অল্প করে শহরের সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠতে থাকে । কলকাতার এক অখ্যাত প্রাইমারী স্কুল থেকে শিক্ষা জীবনের শুরু করে সিন্ড্রেলা । কিন্তু মায়ের বয়স বাড়ছে । খেটে খাওয়ার উপযোগী আর কত দিন ? একদিন বিকেলে সিন্ড্রেলা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে মা কে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখে ।

কি হয়েছে মা ?

>> বুকের মধ্যে ব্যাথা হচ্ছে খুব । নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ।

মায়ের অসুস্থতা সিন্ড্রেলা কে ব্যাথিত করে । কি করবে বুঝে উঠতে পারে না । অবশেষ উপায় না পেয়ে সিন্ড্রেলা চলে যায় এই গল্পের মুদি দোকানির কাছে । প্রিয় পাঠক,পাঠিকা , এই সেই মুদি দোকানি যার বাড়িতে সিন্ড্রেলার মা ফরমায়েশ খাটতো । বিনিময়ে তিন বেলা খাবার আর মাস শেষ কিছু নগদ অর্থ পেত । 

মুদি দোকানি সিন্ড্রেলা কে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসতো । মায়ের অসুস্থতার খবর দিলে দোকানি ওকে নিয়ে মায়ের কাছে আসে । ততক্ষনে মায়ের অবস্থা অধিকতর খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে । সন্ধ্যায় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো । কিন্তু বিধাতার অমোঘ নিয়মে সিন্ড্রেলা মা হারা হলো । 

সিন্ড্রেলার ঠাই হলো মুদি দোকানির ঘরে । একমাত্র মেয়ের সাথে সিন্ড্রেলাকেও পরম যত্নে মানুষ করার দায়িত্ব নিলেন । সেখানেই পড়াশোনা চালিয়ে মাধ্যমিক পাশ করল সিন্ড্রেলা । কেন যেন মুদি দোকানি চাচ্ছিলো সিন্ড্রেলা পড়াশোনা শিখে মানুষের সেবা করুক । তাই মাধ্যমিক পাশ করে সিন্ড্রেলা নিজ যোগ্যতায় ভর্তি হলো শহরের নাম করা নার্সিং ইন্সটিটিউটে। মধ্যবিত্ত মুদি, নিজের সংসার চালিয়ে নিজের মেয়ের মতোই সিন্ড্রেলা কে পড়াশোনার খরচ দিতে লাগলো। এইভাবে কেটে গেল আরও অনেক দিন। পড়াশোনা শেষ করে সিন্ড্রেলা সরকারি চাকরি পেয়ে গেল। গল্প টা এখানেই শেষ হতে পারতো।

গল্পের লেখক খুব সংক্ষেপে মুদির পরিবার কে স্কিপ করে গিয়েছেন। বাদ পড়েছে সিন্ড্রেলার ব্যাক্তিগত সুখ দুঃখ আরও অনেক কথা।

আবার গল্পের নেগেটিভ চরিত্র দেখাতে মুদি কে দুঃশ্চরিত্র বানাতে পারতো।

আবার    সিন্ড্রেলা কেও ইতিহাসের সেরা অভিনেত্রী বানাতে পারতো। 

তাই বলা    যায় সিন্ড্রেলা নয়, এখানে মুখ্য    লেখক    এবং তার প্রয়াত স্ত্রী।। 

হয়তো একদিন সিন্ড্রেলা অন্য রুপে ফিরে আসবে আপনাদের মাঝে ।

চলবে........................


Post a Comment

0 Comments